সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
৬ দিনের নবজাতক সন্তানকে বুকের সঙ্গে লেপ্টে ধরে গাইনি ওয়ার্ডে দুধ খাওয়াচ্ছেন পাগলি। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্য রোগীরা পাগলি ও তার সন্তানকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন চারদিকে। সবাই শিশুটিকে দেখছেন আর আফসোস করছেন।
পাগলির এ অবস্থার জন্য অজ্ঞাতনামা পুরুষটিকে গালমন্দও করেছিলেন অনেকে। কিন্তু পাগলির চেয়ে জন্ম নেওয়া নবজাতকটিকে নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সবাই। অনেকে শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইলেও আইনি জঠিলতার কারণে বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারী ও তার সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছে। তার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষ ছেড়ে দিলেও মা ও সন্তান বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করছেন। শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন। তাই স্থানীয় থানায় ওই নারীর জন্য সাধারণ ডায়রিসহ সমাজসেবা অফিসকেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
অন্যান্য রোগীদের সমস্যা হওয়ায় গাইনী ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষেই বিছানা পেতে তাকে স্থানে দেওয়া হয়েছে। তার দেখভাল করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নার্সের পাশাপাশি আয়াদেরও তাকে নজরদারিতে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নবজাতককে দুধ খাওয়াচ্ছেন ওই নারী। কথা বলতে চাইলে শুধু হাসছিলেন। নাম ও পরিচয় কী জিজ্ঞেস করা হলেও শুধু হাসেন।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের নুর নাহার বলেন, সে (পাগলি) রাতে সন্তান রেখে দুইবার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা তাকে ফিরিয়ে সন্তানের পাশে রেখেছি। তার নাম ও পরিচয় জানার চেষ্টা করলেও কিছু বলেনি। শুধু হাসে। শিশুটির কী হবে এটা নিয়ে আমরাও চিন্তিত।
আজিজুন নাহার বলেন, যে এই পাগলির সর্বনাশ করেছে আল্লাহ তার সর্বনাশ করুন। এত সুন্দর শিশুটির এখন কী হবে? নারীর অভিভাবক খুঁজে অন্তত শিশুটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া উচিত।
সদর হাসপাতালের সমাজসেবা কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিজা বলেন, আমরা নবজাতকের খোঁজ খবর নিচ্ছি। নারীর অভিভাবককেও খোঁজা হচ্ছে। তাছাড়া অনেকে শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, এভাবে মায়ের কোল থেকে নবজাতককে দত্তক দিতে হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে চিকিৎসকের সামনে তাকে ভবঘুরে হিসেবে প্রত্যয়ণ করতে হবে। তারপর আদালতের মাধ্যমে দত্তক কাজ সম্পন্ন করা যাবে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে এই প্রক্রিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের উপপরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ওই নারী ও তার চিকিৎসার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষ ছেড়ে দিয়ে তাদের সেবা চলছে। তবে বাথরুম ব্যবহারের বদলে ওই নারী বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা সমাজসেবা অফিস, থানা ও প্রশাসনকে অবগত করেছি।